Hot Widget

Type Here to Get Search Results !

Ads

বাবাজী মহারাজের বাণীঃ শ্রীভগবান যখন দূরে থাকেন, তখন তিনি শ্রীভগবান; যখন কাছে আসেন, তখন তিনি শ্রীগুরু # বিষয় সঙ্গ আর বিষয়ীরংঙ্গ সাধকের এত ক্ষতি করে, এমনটি আর কিছুতেই হয় না # সন্ন্যাস কর্মত্যাগে নাই, সন্ন্যাস কামনা ত্যাগে # সবজান্তা বিজ্ঞ সাজিয়া কর্মত্যাগ না করিয়া কিছু অজ্ঞ থাকিয়া কঠিন পরিশ্রম করা কল্যাণজনক # সাধু যদি জপ ধ্যান না করিয়া, ঈশ্বরকে না ডাকে, তবে কেবলমাত্র বৈরাগ্য, মহন্ত, পদবী বা জটাধারী বেশ ভূষার দ্বারা সে যথার্থ সাধু হতে পারে না

সংক্ষিপ্ত জীবনী

নিম্বার্ক সম্প্রদায়ের এই মহাসাধকের জন্ম ১৯৫৯ সালের ৩০ জুলাই পূর্ব বর্ধমানের মেমারী থানার বড়র গ্রামে। পিতার নাম অর্ধেন্ধু চট্টোপাধ্যায় ও মাতার নাম শ্রীমতী গীতা চট্টোপাধ্যায়। তার পূর্বাশ্রমের নাম ছিল প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়। 
 শৈশব থেকেই তিনি গড় বালকদের মতো ছিলেন না। দ্বাদশ বছরে পদার্পণের আগেই তার সঙ্গে দেখা হয় ভারতের সাধুসমাজের আর এক শিরোমণি স্বামী জানকীদাস কাঠিয়া মহারাজের সঙ্গে। আর তখন থেকেই তার পথ বদলে যায়। পরবর্তীকালে এই সাধক শ্রীশ্রী ধনঞ্জয় দাসজী কাঠিয়া মহারাজের শিষ্য শ্রীশ্রী স্বামী জানকীদাসজী কাঠিয়ার কাছে সন্ন্যাসধর্মে দীক্ষা গ্রহণ করেন। 
ধর্মের পথে অগ্রসর হলেও শিক্ষার দিকে ছিল স্বামী প্রজ্ঞাদাসজীর এক অমোঘ টান। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্বামী বিবেকানন্দ, ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের ভক্ত এই সাধক ১৯৮১ সালে দর্শনে স্নাতক হলেন বর্ধমানে রাজ কলেজ থেকে। 
 ১৯৮৩ সালে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফার্স্ট ক্লাসে ফার্স্ট হয়ে স্বর্ণপদক নিয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করলেন। যদিও, সে বছরের পরীক্ষা বিশেষ কারণে ১৯৮৫ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৮৫ সালের ২৯ মার্চ তার সন্ন্যাস ধর্মে দীক্ষা হয়। প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় থেকে তিনি এদিন পরিচিত হলেন স্বামী প্রজ্ঞাদাস নামে। তার গুরুদেব স্বামী জানকীদাসের ইচ্ছানুসারে তিনি এরপর হাত দেন গবেষণার। গবেষণার বিষয় ছিল কার্ল মার্ক্স ও নিবার্ক মতবাদের তুলনা।
 ১৯৯১ সালে তিনি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তার গবেষণার স্বীকৃতি হিসাবে লাভ করেন ডক্টরেট ডিগ্রি। তার থিসিসের নাম ছিল – A Society in the thought of Marx and Nimbarka” তার এই গবেষণা ভারতীয় সমাজতত্ববিদদের কাছে এক নতুল আলো। 
এই মহামানব এর পর ব্রতী হলেন গুরু আজ্ঞা পালনের মধ্য দিয়ে সাধন পথে অগ্রসর হতে। পরবর্তীকালে তিনি তার গুরুদেবের নামে আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন পূর্ব বর্ধমানের অগ্রদ্বীপের কাছে নূতনগ্রামে। এরপর তিনি একের পর এক কর্মযজ্ঞে লিপ্ত হয়ে পড়েন। গ্রামের উন্নতি সাধনের পাশাপাশি তিনি স্থাপন করেন উচ্চ-বিদ্যালয়, লাইব্রেরীসহ একাধিক জন-কল্যাণমূলক কাজ। পাশাপাশি রচনা করেন একাধিক গ্রন্থ। তার রচিত গীতার ভাষ্য ‘গীতা চিরন্তন’ ভারতীয় হিন্দু সমাজের কাছে সাদরে গৃহিত হয়। পরবর্তী সময়ে প্রকাশিত হয় এর ইংরাজী সংষ্করণ।
 ২০১১ সালে তিনি নূতনগ্রাম তপোবন আশ্রমে নির্মান করান শ্রীরাধাকুঞ্জবিহারীজীর নূতন মন্দির। শ্রীশ্রী প্রজ্ঞাদাস কাঠিয়া মহারাজ সন্ন্যাসী হয়েও বিজ্ঞানের সঙ্গে ধর্মের মেল-বন্ধনের কথা বলে এবং জাতিভেদপ্রথার নূতন ব্যাখ্যা দিয়ে ভারতীয় ধর্মীয় সমাজে এক নূতন দিগন্ত আনেন। তার নূতনভাবে সমাজচিন্তা ভবিষ্যতের সমাজতত্ববিদদের কাছে এক গবেষণার বিষয়। 
 যে দিনটি আমাদের চেতনার গভীরে ভয়ঙ্করভাবে আঘাত করেছিল, সেই দিনটি অর্থাৎ ২৮ ফেব্রুয়ারী আগতপ্রায়। এই দিনটিতে আমরা বাবাজী মহারাজের পার্থিব শরীরকে হারিয়েছি। 
কিন্তু, ২০১৪ থেকে ২০২৩ এ এসে উপলব্ধি করেছি – সময় এই মহান সন্ন্যাসীর কাছে পরাভূত – মৃত্যু, জীবনের পরিণতি হলেও, মৃত্যুই শেষ কথা বলে না। যিনি বিশ্ব-ঋষিকবি রবীন্দ্রনাথের একজন বিমুগ্ধ পাঠক ছিলেন, তিনি যেন সেই দিন বলে গেলেন – ‘আমি মৃত্যু-চেয়ে বড়’ এই শেষ কথা বলে যাব আমি চলে।" তিনি মৃতুঞ্জয়, তাই আজও বেঁচে আছেন আমাদের মাঝেই। তিনি আমাদের বদ্ধ মনে বন্দী থাকা চেতনাকে দিয়েছিলেন মুক্তির পথ। তিনি ছিলেন চির-আনন্দ।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.