Hot Widget

Type Here to Get Search Results !

Ads

বাবাজী মহারাজের বাণীঃ শ্রীভগবান যখন দূরে থাকেন, তখন তিনি শ্রীভগবান; যখন কাছে আসেন, তখন তিনি শ্রীগুরু # বিষয় সঙ্গ আর বিষয়ীরংঙ্গ সাধকের এত ক্ষতি করে, এমনটি আর কিছুতেই হয় না # সন্ন্যাস কর্মত্যাগে নাই, সন্ন্যাস কামনা ত্যাগে # সবজান্তা বিজ্ঞ সাজিয়া কর্মত্যাগ না করিয়া কিছু অজ্ঞ থাকিয়া কঠিন পরিশ্রম করা কল্যাণজনক # সাধু যদি জপ ধ্যান না করিয়া, ঈশ্বরকে না ডাকে, তবে কেবলমাত্র বৈরাগ্য, মহন্ত, পদবী বা জটাধারী বেশ ভূষার দ্বারা সে যথার্থ সাধু হতে পারে না

এবার ঘরের খোঁজেঃ ড. স্বামী প্রজ্ঞাদাস কাঠিয়া

শ্রীবাবাজী মহারাজের এই প্রবন্ধটি ‘অর্ঘ্য’ পত্রিকার শারদ সংখ্যাতে (২৬ সেপ্টেম্বর, ২০০৯) প্রকাশিত হয়। ওই পত্রিকার সম্পাদক শশ্বত বসুর কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। মূল লেখাটি সাধুভাষায় থাকলেও সকলের সুবিধার জন্য চলিত ভাষায় রূপান্তরিত করা হয়েছে
সংসারে দুঃখ না আসাটা কল্যাণের নয়। দুঃখের মধ্যে সমচিত্ততার সাধনই বড় কথা। দুঃখের মধ্যেই দুঃখহারীকে বেশি মনে পড়ে। জপে শ্রীভগবানের সন্ধান পেলে সে আর জপ ছাড়তে চায় না।। 


শ্রীশ্রী রামদাসজী কাঠিয়াবাবাজী মহারাজ বলতেন।
 “তিন কাল বীত গিয়া অভী অপনা ঘর খোঁজ করলে।“ -
অর্থাৎ তিনকাল পার হয়ে গেছে, এখন নিজের ঘর খোঁজ করে নাও। এখানে ঘর বলতে কী বোঝানো হয়েছে তা আমাদের আলোচনার বিষয়। 
চাকরি জীবন থেকে অবসর নিয়ে নিশ্চিন্ত সুখে শান্তিতে বাস করার জন্য ইঁট, বালি, সিমেন্ট দিয়ে যে বাসাবাড়ি বানানো হয়, তা নিশ্চয় এই ‘ঘর’ শব্দের অর্থ নয়।, কারণ সেখানে আমরা স্থায়ীভাবে থাকতে পারিনা। কিছুদিন থেকে মৃত্যুর পর আমাদের অন্য কোনও এক অজানা জায়গায় চলে যেতে হয়।, তাই এটা আমাদের স্থায়ী ঠিকানা নয়।
এক রাজা একটা সুন্দর বাড়ি তৈরি করেছিলেন। তার এক সাধু বন্ধু ছিল। বাড়ি তৈরি হলে, তিনি সাধুবাবাকে সেটা দেখাবার জন্য নিয়ে আসেন এবং খুব উৎসাহের সঙ্গে বাড়ি দেখাতে থাকেন। সাধুবাবা দেখতে থাকলেন।,, কিন্তু খুব একটা উচ্চ প্রশংসা করলেন না। 
এটা দেখে রাজা হতাশ হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন – “আমার বাড়ি বানানোতে কি কোথাও ত্রুটি হয়েছে? সাধুবাবা বললেন, “হ্যাঁ, খুব ত্রুটি হয়েছে।“
 রাজা জিজ্ঞাসা করলেন, “কী ত্রুটি?” 
 সাধুবাবা জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি বাড়িটা বানিয়েছ কেন?” 
রাজা বললেন, “থাকবার জন্য।“ 
সাধুবাবা বললেন, “দরজাটি করেছ কেন?” 
 রাজা বললেন, “যাতায়াত করবার জন্য।“ 
সাধুবাবা বললেন, “ওটাই ভুল হয়েছে। তুমি থাকবার জন্য বানিয়েছ, কিন্তু ঐ দরজা দিয়ে একদিন তোমাকেই নিয়ে চলে যাবে। আর ফিরিয়ে নিয়ে আসবে না। তাই এটা তোমার আসল ঘর নয়।“
শ্রীশ্রী কাঠিয়াবাবা যে ঘরের কথা বলেছিলেন, সেটা শ্রীশ্রী রাধাকৃষ্ণের শ্রীচরণ। এটা আমাদের দুটি ভ্রুর মাঝখানে অবস্থিত। এটা দ্বিদল পদ্ম বা আজ্ঞাচক্র। ওইখানেই মন স্থির করে জপ করতে হয়। তাই জপ হল ঘরের সন্ধান করা আর সমাধি হল ঘরের সন্ধান লাভ। 
ফুরসৎ পেলেই তাই আসনে বসে জপ করতে হয়। ওটাই কাজের কাজ, ওটাই ঘরের খোঁজ। দুটি ভ্রুর মাঝখানে বসে জপ করাই যথার্থ অর্থে নির্জনতায় বাস।,
এটাই ভগবানের শ্রীচরণে বাস। পরম নিশ্চিন্তে বসে জপ করতে হয়। বাইরের নিররজনতারও দরকার পড়ে। নিষ্ঠাই আসল কথা। নিশ্চিন্ত হয়ে অবিচলিত শ্রদ্ধা সহ তন্ময়তাই নিষ্ঠা। সমস্ত কিছু দান করে দিয়ে জপ করতে হয়। 
এখানে নিজের মান, অভিমান, অহঙ্কার, পৃথক ইচ্ছা, জল্পনা, কল্পনা, ওই সমস্ত ত্যাগ করাকে আসল দান বলা হইয়েছে। 
শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরাণে আরও সুন্দর করে বলা হয়েছে – “সমস্ত প্রাণীর প্রতি বিদ্রোহ আচরণ পরিত্যাগই দান।“ জগত জগতের পথে চলতেই থাকবে। 
এর প্রতি ওঔদাসীন্যই যথার্থ অর্থে বৈরাগ্য। 
শ্রীশ্রী সন্তদাস বাবাজী বলেছেন, “যার চিত্ত এরূপ হয়েছে যে, ধৈর্য্য কিছুতেই চ্যুত হয় না এবং অন্যের কৃতকর্মে আর বিদ্বেষবুদ্ধি আসে না, তারই চিত্ত নির্মল হয়েছে বলা যায় এবং তিনিই যথার্থ শক্তিলাভের অধিকারী হন। বস্তুতঃ এরূপ সকলের প্রতি বিদ্বেষ বুদ্ধই রহিত যিনি হন, তিনি অন্যের কাজে দোষ দর্শন করে অশান্ত চিত্ত হন না। 
তিনিই যথার্থপক্ষে একান্তবাস ও ধ্যান অবলম্বন করে ভজনে প্রবৃত্ত হওয়ার যোগ্য হন।“ ভোগান্তির চূড়ান্ত না হলে এরকম অবস্থা লাভ হয়না। তাই সংসারে দুঃখ না আসাটা কল্যাণের নয়। দুঃখের মধ্যে সমচিত্ততার সাধনই বড় কথা। দুঃখের মধ্যেই দুঃখহারীকে বেশি মনে পড়ে। জপে শ্রীভগবানের সন্ধান পেলে সে আর জপ ছাড়তে চায় না। জপে অবশ্যভাবেই শ্রীকৃষ্ণমূর্তির ধ্যান হতে থাকে। মন্ত্রটি তন্ময়ভাবেই শুনতে থাকাই মন্ত্রের ধ্যান। এটাই শ্রীকৃষ্ণের ধ্যান। 
শ্রীকৃষ্ণমূর্তি অবিদ্যারহিত এবং স্বয়ংসিদ্ধ। এই মূর্তির এমন এক স্বাভাবিক শক্তি আছে যে এটা সহজেই সাধকের চিত্তের সমস্ত মলিনতা, কলুষতা, সাধকের হৃদয়ের সমস্ত পাপ দূর করে দিয়ে তাকে নিজের প্রতি আকর্ষিত করে নেয়। 
নদী যেমন অবশভাবে সাগরের দিকে ধাবিত হয়, সাধকের চিত্ত সেরকম অবশ্যভাবে শ্রীভগবানের দিকে ধাবিত হতে থাকে। পরিশেষে এক্তাপ্রাপ্ত হয়। 

শ্রীনিম্বার্কাচার্য্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সম্বন্ধে বলেছেন- 

“নান্যা গতিঃ কৃষ্ণপদারবিন্দাৎ 
সংদৃশ্যতে ব্রম্ভশিবাদিবন্দিতাৎ 
ভক্তেচ্ছয়োপাত্তসুচিন্ত্যবিগ্রহা- 
দচিন্ত্যশক্ত্রবিচিন্ত্যশাসনাৎ।।“ 

অর্থাৎ, ভকতগণের কল্যাণ করবার জন্য শ্রীভগবান এই শ্রীকৃষ্ণরূপ সুচিন্ত্য বিগ্রহ রূপ ধারণ করেছেন। এই রূপের মহিমা অপার। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যিনি অচিন্ত্য, জগতশাস্তা, ব্রম্ভা-শিবাদি বন্দিত সেই শ্রীকৃষ্ণের শ্রীচরণ ভিন্ন জীবের আর কোনও গতি দেখা যায় না। শ্রীগীতায় শ্রীভগবান নিজের মুখেই বলেছেন – “মত্তঃ পরতরং নান্যত কিঞ্চিদস্তি ধনঞ্জয়” –
 অর্থাৎ, “হে ধনঞ্জয়, আমার থেকে শ্রেষ্ঠ তত্ব আর কিছু নেই।“ শ্রীকৃষ্ণরূপী ভগবানই নিম্বার্ক সম্প্রদায়ের উপাস্য। এরা শ্রীকৃষ্ণগত প্রাণ হয়ে পূর্ণ ব্রম্ভ বুদ্ধিতে তার ভজন ও তাকেই যাজন (পুজো) করেন। এবং সেখানেই আত্মনিবেদন করে থাকেন। 
চলবে…

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.