Hot Widget

Type Here to Get Search Results !

Ads

বাবাজী মহারাজের বাণীঃ শ্রীভগবান যখন দূরে থাকেন, তখন তিনি শ্রীভগবান; যখন কাছে আসেন, তখন তিনি শ্রীগুরু # বিষয় সঙ্গ আর বিষয়ীরংঙ্গ সাধকের এত ক্ষতি করে, এমনটি আর কিছুতেই হয় না # সন্ন্যাস কর্মত্যাগে নাই, সন্ন্যাস কামনা ত্যাগে # সবজান্তা বিজ্ঞ সাজিয়া কর্মত্যাগ না করিয়া কিছু অজ্ঞ থাকিয়া কঠিন পরিশ্রম করা কল্যাণজনক # সাধু যদি জপ ধ্যান না করিয়া, ঈশ্বরকে না ডাকে, তবে কেবলমাত্র বৈরাগ্য, মহন্ত, পদবী বা জটাধারী বেশ ভূষার দ্বারা সে যথার্থ সাধু হতে পারে না

গুরুশক্তি ১


প্রথমেই মনে প্রশ্ন জাগে - গুরু কে ? শ্রী রামকৃষ্ণদেব বললেন - ঈশ্বর যুগে যুগে লোক শিক্ষার জন্য নিজে গুরুরূপে অবতীর্ণ হন। সচ্চিদানন্দই গুরু - অর্থাৎ তিনি হলেন সত্, চিত্ আর আনন্দ বা সত্য, জ্ঞান আর আনন্দের প্রতিমূর্তি। 
 শ্রী বাবাজী মহারাজ বলতেন - গুরু আসলে পরমাত্মা বা ব্রহ্ম, কিন্তু জীবকে উদ্ধার করিবার নিমিত্ত তিনি একটা মনুষ্য দেহের ভিতর আসিয়া বা অবস্থান করেন। এই মনুষ্য দেহটি তাঁহার আধার। সুতরাং গুরুরূপে এই জগতের প্রকাশের জন্য ঈশ্বর বা পরমাত্মা বা ব্রহ্মকে একটি মনুষ্য আধার গ্রহণ করতে হয। এখন দ্বিতীয় প্রশ্নের উদয় হয় -- কিরূপে তিনি মনুষ্য শরীর গ্রহণ করেন ? 
প্রথমতঃ - অবতার রূপে। 
দ্বিতীয়তঃ- মুক্ত পুরুষ রূপে। 
 তৃতীয়তঃ- প্রাচীন সম্প্রদায়ের পরম্পরার গুরুদেব রূপে। 
প্রথমতঃ - ঈশ্বর বা অবতার মনুষ্য রূপ ধারণ করে এই জগত সংসারে অবতীর্ণ হন - এটাই শ্রুতি ,পুরান বা গীতার অনুশাসন। অর্থাৎ সর্বশক্তিমান ও সর্বজ্ঞ হযেও জাগতিক রূপ নিয়ে বা মানবোচিত শরীর, বুদ্ধি ও মনকে ধারণ করেন তাকে অবতার বলা হয। এই অবতার রূপ সমন্ধে একটু বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
শ্রী মহাভারত ও অন্যান্য শাস্ত্র মতে - ক্ষত্রিয কুলের বিনাশ সাধন করতে, পৃথিবীর ভার অপনোদনের জন্য এবং যথার্থ ধর্মপদ প্রদর্শন করতে বা পুনরায় শান্তিপদ স্থাপন করার উদ্দেশ্যে - নরনারাযণ ঋষিদ্বয রূপে এই জগৎ সংসারে প্রকাশিত হয়েছিলেন। 
 শ্রীভগবান বিষ্ণুর বিগ্রহদ্বয মনুষ্যলোকে ক্ষত্রিয বংশে নারায়ণ শ্রীকৃষ্ণ রূপে আর নরদেব শ্রীঅর্জুন রূপে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুন বিষ্ণুর অবতার হলেও শ্রীকৃষ্ণ তত্সমস্ত বিষয়ে অবগত ছিলেন এবং তাঁর মধ্যে বিষ্ণুশক্তি প্রকটিত ছিল। 
 কিন্তু অর্জুন অবতার হয়েও তত্সমস্ত বিষয়ে সম্পূর্ণ রূপে প্রকাশিত ছিল না। কারণ জগত কল্যাণের জন্য নর রূপে অবতার অর্জুন আত্মবিস্মৃত ও অজ্ঞ রূপে প্রকটিত হযেছিলেন। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণের মধ্যে বিজ্ঞান ও শক্তির প্রকাশ প্রকটিত ছিল। 


 অবতার দুরকমের - অংশাবতার ও পূর্ণাবতার। 
 শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রীরামচন্দ্র - এই জগত সংসারে পূর্ণাবতার রূপে পূজিত হন। 
পাশ্চাত্য দার্শনিক স্পিনোজা - খ্রিস্টের অবতার সমন্ধে বললেন - ' When father gives birth to his Son in me I am his very Son and not another : we are another in manhood true, but there I am the Son himself and no other. ' ( X L) অর্থাৎ যেহেতু পরমপিতা আমার মাঝে ঈশ্বর পুত্রের আবির্ভাব ঘটান- সেই হেতু আমি তাঁর সেই পুত্রই , অপর কিছু নই। মানবিক দিক হতে আমরা বিভিন্ন সত্য, কিন্তু আমিই ঈশ্বর পুত্র স্বয়ং, অন্য কেউ নই।
সুতরাং খৃষ্টীয ধর্মের প্রতিষ্ঠিতা ঘোষনা করেছিলেন - ' আমি ও আমার পিতা এক '। তাই বলা যেতে পারে মহান পুরুষ যীশু ছিলেন সেই পরমপিতা বা পরমব্রহ্মের পুত্র বা অংশ। হিন্দু শাস্ত্র মতে ভগবান বুদ্ধকে অবতার মানা হয়। 
কিন্তু বৌদ্ধধর্ম মতে -- বুদ্ধদেব কোন ঈশ্বর ছিলেন না বা কোন নবী বা অবতার ছিলেন না। বৌদ্ধধর্ম বলে-- আমি বা আমার ভাই মানুষ বা পশু সব এক। যাইহোক আমাদের আলোচ্য বিষয় হল কিভাবে অবতার বা মহাপুরুষেরা মনুষ্য শরীর গ্রহণ করে জগতের কল্যাণ সাধন করেন। 
 শ্রীমহাভারতে শ্রীভগবান শ্রীকৃষ্ণ রূপে অবতরণ করে মানব কল্যাণের জন্য শ্রী অর্জুনকে ও শ্রী উদ্ধবকে যে উপদেশ দিয়েছিলেন তা আজও জগত সংসারে মানুষের জীবনের পথিকৃত। তদ্রুপ খৃষ্টীয ধর্মে মহানপুরুষ যীশুর ও বৌদ্ধধর্মে বুদ্ধদেব যে ভাবে মানব জীবনের উন্নতি সাধনের জন্য যা উপদেশ দিয়েছিলেন তা আজও সমানভাবে সমাদৃত।


 দ্বিতীয়ত : - অবতারের ন্যায মুক্ত পুরুষ ও এই জগতে পুনরায় মনুষ্য রূপ ধারণ করে জগত কল্যাণের স্বার্থে এই সংসারে প্রকটিত হন। এখন এই মুক্ত পুরুষ বা মোক্ষ প্রাপ্ত পুরুষ  সম্বন্ধে   একটু বিস্তারিত আলোচনা করা যাক। 
প্রথম প্রশ্ন- এই মুক্ত পুরুষ বা মোক্ষ প্রাপ্ত পুরুষ কে? শ্রী রামানুজ আচার্যের মতে - মোক্ষ হল জীবত্বের পরিপূর্ণ বিকাশ। বদ্ধাবস্থায জীবের জ্ঞান, কর্ম ও ভোগ সীমিত হয়ে পড়ে আর মোক্ষাবস্থায জীব সর্বজ্ঞ, সর্বময কর্তা ও পূর্ণ আনন্দমযের ভোক্তা। 
তাই মুক্ত পুরুষ ব্রহ্মের ন্যায সচ্চিদানন্দময অর্থাত সত্, চিত আনন্দ বা সত্য জ্ঞান ও আনন্দের প্রতিমূর্তি। তবে পার্থক্য হল - অনু পরিমাণ আর ব্রহ্ম বিভু পরিমাণ এবং ব্রহ্ম জগত স্রষ্টা কিন্তু মুক্ত পুরুষ জগৎ স্রষ্টা নয। ভারতীয় দর্শনে মুক্তি দ্বিবিধ - জীবন্মুক্তি ও বিদেহ মুক্তি।
জীবিত অবস্থায যে মুক্তি তাকে বলে জীবন্মুক্তি আর দেহের বিনাশের পর যে মুক্তি তা বিদেহ মুক্তি। অনেক আচার্যের মতে - জীবন্মুক্তি পূর্ণ মুক্তি নয , মুক্তির আভাস মাত্র। 
আবার অনেক আচার্যের মতে- আভাস কেন, সেখানে পূর্ণ মুক্তির ভাব থাকে। এখন প্রশ্ন জাগে মোক্ষ বা অমরত্বের পর আত্মা কি অবস্থার উন্নতি হয়? 
 কতিপয ঋষিগণ বা আচার্যের মতে - দেহ বিলীন হওযার পর আত্মা বর্তমান থাকে, কারণ দেহ ধারণ করার পূর্বে সে বর্তমান ছিল কারণ আত্মা নিত্য, অজর ও অমর। তবে মোক্ষ লাভের পর সেই পুরুষ এই জগত সংসারে মুক্ত ক্রিয়া প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন অর্থাত এই জগত কল্যাণের জন্য পুনরায় মনুষ্য শরীর গ্রহণ করতে পারেন। 


যদিও মনুষ্য রূপ ধারণ করার পর নতুন কর্মের প্রযোজন থাকে না, তবে শ্রীভগবানের জন্য সম্পূর্ণই থাকে।
মোক্ষ লাভের অর্থ হল চেতনা যা জন্ম মৃত্যুর অতীত, সব বন্ধন বা সীমার অতীত ও আনন্দের অর্থাত সচ্চিদানন্দ পরম পুরুষের চেতনা। কতিপয় আচার্যের মতে আত্মা ব্রহ্মলীন হযে যায। তারপর শ্রীভগবানের ইচ্ছায মনুষ্য শরীর ধারণ করে জগত কল্যাণের জন্য কার্য করেন। এই জগৎ সংসারে নিত্য মুক্ত পুরুষের প্রকৃষ্ট উদাহরণ - শ্রী নারদ ঋষি।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.